হাই প্রেসার কমানোর তাৎক্ষণিক উপায়
হাই প্রেসার কমানোর তাৎক্ষণিক উপায় :হাই প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। সঠিক খাদ্যগ্রহনে মাধ্যমে প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। তাই আমাদের এই ওয়েবসাইটে হাই প্রেসার এবং রক্তচাপ হওয়ার কারন, লক্ষণ, এবং হাই প্রেসার কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।
হাই প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ কীভাবে সৃষ্টি হয়
হাই প্রেসার বলতে আমরা উচ্চরক্তচাপেকে বুঝি।
আমাদের শরীরের রক্তনালী রাবারের মতো। প্রয়জনে প্রসারিত এবং সংকুচিত হতে পারে৷ এই রক্তনালী যদি শক্ত হয়ে যায় তখন প্রয়োজন মতো প্রসারিত হতে পারে না রক্ত চলাচলে বাদা বেরে যায় দেখা দেয় হাই প্রেসার।
কীভাবে বুঝবেন উচ্চ রক্তচাপঃ
উচ্চ রক্তচাপ বোঝার কারন হলো: মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি এমন কিছু লক্ষণ দিতে পারে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকতে হবে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কিন। যদি কারো রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিলিমিটার মার্কিন এবং তারচেয়ে বেশি হয় সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। বয়স অনুযায়ী এ মাত্রা কিছু কম এবং বেশি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ গুলো কি কি?
প্রেসার বেড়ে গেলে শারীরের কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারেঃ
✪উচ্চরক্তচাপের ফলে রক্তনালীগুলো দূর্বল হয়ে যেতে পারে। রক্তনালীর দেওয়াল পাতলা হয়ে বেলুনের মতো ফুলে ওঠে ছিড়ে যেতে পারে। তখন বেড়েনে মারাত্মক রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। একই সমস্যা পেটের রক্তনালীতে হতে পারে।
✪রক্তনালীতে চর্বি জমা। সুস্থ-সবল রক্তনালী তার গায়ে চর্বি জমতে দেয় না। তবে কুচচ্ছ রক্তচাপ রক্তনালীকে ক্ষতি করতে থাকে। তখন রক্তনালীর গায়ে চর্বি কোলোস্টান কেলসিয়াম জমতে থাকে। এই চর্বি জমাট বড় হয় এবং রক্তনালী সরু হয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় চর্বি গায়ে এসে রক্ত জমাট হয় এবং রক্তনালীর মুখ পুরোটা বন্ধ হয়ে যায়। তখন রক্ত আর সামনে যেতে পারেনা। এটা খুবই মারাত্মক ঘটনা।
আরও পড়ুনঃ চোখের এলার্জি হলে করণীয়?
✪ বেড়েনের রক্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে বেড়েন হয় স্ট্রক তকন বেড়েনের এক আংশ আর রক্ত পায়না। কোডগুলো পরে যায়। একই ভাবে হার্ড এর রক্তনালী বন্ধু হলে হয় হার্ড স্টোক।
এছাড়াও হাই প্রেসার দীর্ঘদিন থাকলে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: হার্ড দূর্বল হয়ে যাওয়া, কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি শক্তি সমস্যা দেখা দেওয়া ইত্যাদি।হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণঃ ☞মাথাব্যথা, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিয়মিত মাথাব্যথা, যা কিছু ক্ষন পর ভালো হয়ে যায়, মাথা ঝিমঝিম করে, বুক ধড়ফড় করা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা।
আরও পড়ুনঃ মিনি স্ট্রোকের চিকিৎসা
☞বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাংসপেশির দুর্বলতা, অনিয়মিত ঘুম, নাক ডাকা, দিনের বেলায় নিদ্রালুতা ইত্যাদি।
হঠাৎ প্রেসার বেরে গেলে যা খাবেনঃ
প্রেসার বেড়ে গেলে যা খেতে হবে তা হলো: প্রেসার বেড়ে গেলে, বেশি ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায় দানা শস্য বা গোটা শস্য।
আরও পড়ুনঃ আগুনে পোড়া প্রাথমিক চিকিৎসা
বিচি জাতীয় খাবার, যেমন, বাদাম, শিমের বিচি, ডাল,ছোলা, লাল চালের ভাত, লাল আটা, আলু, সবুজ শাকশবজি, টমেটো, তরমুজ, দুধ ও দই ইত্যাদি খেতে হবে।
হাই প্রেসার কমানোর জন্য কি খাওয়া উচিতঃ
রক্তচাপের প্রভাব মোকেবেলার জন্য পটাসিয়ামযুক্ত খাবার যেমন, কলা, কমলালেবু, পালংশাক, এবং মিষ্টি আলু এগুলোতে সোডিয়াম থাকে, এবং নিম্ন রক্তচাপের প্রভাব মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। পুষ্টকর খাবার খেতে হবে যেমনঃ চর্বিহীন মুরগী, মাছ,লেবু, টফুর মতো প্রেটিনের চর্বিহীন উৎস বেছে নিতে হবে। এগুলোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম এবং রক্তচাপ না বাড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে।
বাহিরের খাবার যেমন, টিনজসত স্যুপ, ফাস্ট ফুড এবং লবণাক্ত স্ন্যাকসের মতো উচ্চ সোডিয়াম খাবারের ব্যবহার সীমিত করুন। সোডিয়াম সামগ্রীর জন্য খাবারের লেবেল পড়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এবং কম সোডিয়াম বিকল্পগুলি বেছে নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ হাপানি প্রতিরোধের উপায়?
পুরো শস্য ফাইভার বেশি সরবরাহ করে। তাই পরিশোধিত শস্যের চাইতে পুরো শস্যের রুটি, পাস্তা, চাল এবং সিরিয়াল বেছে নিতে হবে। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
মাছ খাওয়ার সময় মাছের মাংসে আমেগা-3 ফ্যাটি থাকা থেকে মাছ খাওয়া উচিত। অমেগা-3 ফ্যাটগুলি হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে করনীয়ঃ
১.ওজন কমানো
২.লবন কম খাওয়া
৩.মধ্যপান বা নেশাদ্রব্য গ্রহন না করা।
৪. প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট জোরে হাঁটতে হবে।
৫. চর্বিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
৬.প্রচুর ফল ও শাকসবজি খেতে হবে।
৭.ঘনঘন রক্ত পরিমাপ না করা।
৮.হাসিখুশি ও প্রফুল্ল থাকা।
১০. মানসিক অবসাদগ্রস্ত দূর করা।
১১.মাছ বেশি খাওয়া।
উচ্চমাত্রার ঔষধ গ্রহণ করে হঠাৎ রক্তচাপের অতিরিক্ত না কমিয়ে ফেলা। হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে ঘুমের ঔষধ খেতে হবে।
হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া যাবে নাঃ
☞খাবারে লবনের পরিমান কমাতে হবে। কাচা লবন খাওয়া যাবে না। অত্যধিক লবণ গ্রহনের ফলে তরল ধারন এবং রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
☞চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। যেমন: গরু, খাসির মাংস, মাখন, পেস্ট্রি কেক ইত্যাদি।
☞ প্যাকেটজাত খাবার বাদ দিতে হবে। যেমন, টিনজাত স্যুপ, প্রক্রিয়াজাত মাংস, চিপস এবং ফাস্ট ফুড উচ্চ পরিমানে সোডিয়াম, অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং অ্যাডিটিভ থাকে যা রক্তচাপকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
☞চর্বিযুক্ত খাবার যেমন, ভাজা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে যেগুলিতে স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট বেশি, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ ইত্যাদি অবদান রাখতে পারে।
☞অতিরিক্ত পরিমানে শর্করা খাবার গ্রহন করলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে উচ্চরক্তচাপের ঝুকি বেড়ে যায়। এবং চিনি যুক্ত পানীয় যেমন, ক্যান্ডি এবং ডেজার্ট , মিষ্টি স্ন্যাকস খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।
☞ দূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে। দূমপান ও মদ্যপান করার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
হঠাৎ প্রেসার কমে যাওয়ার কারনঃ
উচ্চরক্তচাপের মতোই নিম্ন রক্তচাপও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লো ব্লাড প্রেসারের আরেক নাম হাইপোটেনশন। অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে লো ব্লাড প্রেসার হতে পারে। চিকিৎসকের মতে, এজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০। এবং রক্তচাপ ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে তাহলে তা লো ব্লাড প্রেসার হিসেবে ধরা হয়। প্রেসার যদি অতিরিক্ত নেমে যায় তাহলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃদপিণ্ডে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না তখন এ রোগ দেখা দেয়। দেহের বিতরে কোন কারনে রক্তক্ষরণ হলে যেমন: রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ হলে, শারীরিকভাবে আঘাতপ্র বা দুর্ঘটনার ফলে রক্তপাত ঘটলে এবং অপুষ্টিজনিত কারনে লো ব্লাড প্রেসার দেখা দিতে পারে।
দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়ঃ
ওজন কমানো অতিরিক্ত ওজন হ্রাস রক্তচাপ কমাতে উল্লেকযোগ্যভাবে সাহায্য করতে পারে। সপ্তাহে কিছুদিন কমপক্ষে ৩০মিনিটের জন্য নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমনঃ দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো বা সাতার কাটা ইত্যাদি।
পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ কলা, কমলালেবু, পালংশাক, টমেটো, মিষ্টি আলু ইত্যাদি এগুলো রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রচুর পটাসিয়াম রয়েছে এমন খাবার খেলে রক্তচাপ কমতে পারে। পটাশিয়াম লবনের প্রভাব রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। বেশি পটাশিয়াম খাবার খেলে প্রস্রাবের মাধ্যমে তত বেশী লবন বেরিয়ে যাবে। রক্তনালির প্রাচীরকে টানটান প্রসারন থেকে মুক্তি দিতে পারে পটাশিয়াম। তাই হাইপারটেনশনে ভূগলে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ মাজা ব্যাথা হলে করণীয়?
আপনার রুটিনে স্ট্রেস হ্রাস করার কৌশলগুলী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যেমন: শ্বাসের বয়ায়াম, ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং আপনার পছন্দের ব্যায়াম করতে পারেন। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
চায়ের মতো ক্যাফিনযুক্ত পানি এবং কফি সীমিত পান করতে হবে। কারন এগুলো বেশি পান করার কারনে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
খাদ্যতালিকায় আরও কিছু খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন: ফল, শাক-সবজি, চর্বিহীন প্রোটিন এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য।
উচ্চ রক্তচাপের ঔষধঃ
উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। রক্তচাপ সনাক্ত হলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে ডাক্তার রোগীকে এক বা একাধিক ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। রোগীর রক্তচাপ, বয়স, বর্ন, ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুকির বিষয়গুলো বিবেচনা করে সঠিক ঔষধ বেছে নিতে হবে।
সাধারণত ঔষধগুলো ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেটগুলো দিনে একবার সেবন করতে হবে। তবে প্রয়োজন হলে দিনে ২ বার সেবন করার পরামর্শ দিতে পারে।
রক্তচাপ অত্যধিক বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীকে একাধিক ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সিজারের সেলাই কতদিন পর কাটতে হয়
আরও পড়ুনঃ নরমাল ডেলিভারির সেলাই শুকাতে কতদিন লাগে?